ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মোরায় লামা ও আলীকদমে দুই হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ।। ফলদ-বনজ বাগানের ব্যাপক ক্ষতি

saiলামা প্রতিনিধি :::

ঘূর্ণিঝড় মোরা তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলার পাহাড়ি জনপদ। প্রলয়ংকরী এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রায় দুই হাজার কাঁচা-ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় আরো তিন হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি। স্থানীয়দের ফলদ ও বনজ বাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এদিকে, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লামা, আলীকদম এবং তৎসংলগ্ন এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ফাঁসিয়াখালী-লামা ও আলীকদম সড়কে অপরিকল্পিত বনায়নকে বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।

গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে লামায় ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানতে শুরু করে। প্রচন্ড বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় লামা ও আলীকদমের ১১ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রায় দু’ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং আরো ৩ হাজার আংশিক ক্ষতি হয়। শত শত একর ফলদ ও বনজ বাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। উপজেলার লামা পৌরসভার চেয়ারম্যান পাড়া, হাসপাতাল পাড়া, লামা মুখ, নয়াপাড়া, হরিণঝিরি, শিলেরতুয়া, রাজবাড়ি, চাম্পাতলী ও টিটিএন্ড ডিসি, মধুঝিরি, কলেজ পাড়া, নয়া বাজার পাড়া, সাবেক বিলছড়ি, কলিঙ্গাবিল, রাজবাড়ি, লাইনঝিরি এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। বাদ পড়ে নাই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরসমূহ। আলীকদমে একাধিক সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আলীকদমের রেপার পাড়া বাজার, আলীকদম সদর, চৈ ংসহ বিভিন্ন এলকায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। লামা উপজেলা রুপসী পাড়া, ফাঁসিয়াখালী, লামা সদর, আজিজনগর, ফাইতং, সরই ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসকল এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানান, প্রাথমিকভাব্‌ কে্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা এখনো সম্ভব না হলেও ধারণা করা হচ্ছে এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ঘর-বাড়ি হারিয়ে অনেকে নিকট আত্মীয়- স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

লামা পৌরসভার টিটিএন্ড ডিসি এলাকার মোঃ শেরআলী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তার কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে তাদের বাগানের বিপুল পরিমাণ অপরিপক্ষ আম ঝরে পড়ে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। লামা- আলীকদম সড়ক এবং লামা- সুয়ালক সড়কসহ উপজেলার আভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে গাছ পড়ে যোগাযোগ এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিকালে এসকল সড়কে সীমিত আকারে ছোট যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। লামা পৌরসভা মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এলাকাগুলোতে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পুরো পৌরসভার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিধস্ত হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভিন্নি ফলদ ও বনজ বাগান মালিকরাও তির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহকে পৌরসভার পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

এদিকে, লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা তারের উপর গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। লামা-ফাসিয়াখালী সড়কের অসংখ্য স্থানে বিদ্যুৎ এর লাইনের উপর সড়ক সংলগ্ন গাছগুলো ভেঙে পড়ে পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, একটি তামাক কোম্পানি সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য লামা- ফাসিয়াখালী সড়কের দু’পাশে অপরিকল্পিতভাবে রেইন ট্রি গাছ লাগিয়েছেন। সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতে এসকল গাছের ঢাল-পালা ভেঙে পড়ে। কখনো কখনো এসকল গাছ সম্পূর্ণ উপড়ে বিদ্যুতের লাইনে পড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যায়। লামা বিদ্যুৎ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ লামা আলীকদম ফাঁসিয়াখালী সড়কের অসংখ্য স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোর প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: